ক্রীড়া প্রতিবেদক: মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেট। টাইগার ক্রিকেটারদের কাছে এই মাঠ হাতের তালুর মতই চেনা। সবুজ-সতেজ চিরচেনা সেই প্রান্তরে মুশফিকুর রহিম পা রেখেছেন ১১২ দিন পর! ১৫ মার্চ এই মাঠে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি, সেটা ছিল লিগের প্রথম রাউন্ড। দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ওই প্রথম রাউন্ড শেষের পরই স্থগিত হয়ে যায় লিগ। এরপর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিযোগিতামূলক কোনো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ক্রিকেটাররাও হয়ে পড়েন ঘরবন্দি।
একেক করে তিন মাস গত হয়েছে, চতুর্থ মাসও গত হওয়ার পথে। বড় লম্বা সময়। ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার এই সময়টায় রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছেন ক্রিকেটাররা। মাঠে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন তারা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) তামিম-মাহমুদউল্লাহ-মুমিনুলদের মাঠে ফেরানোর কথা বেশ জোর দিয়ে ভাবছে। ইতোমধ্যে দেশের আটটি ভেন্যুকে অনুশীলনের জন্য প্রস্তুত করে তোলার কাজ চলছে। গত সপ্তাহে বিসিবি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, ক্রিকেটারদের অনুশীলনে ফেরানোর সবরকম প্রস্তুতিই নিয়ে রাখছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে সোমবার হঠাৎ করে মিরপুরে মুশফিকের আগমন। না, অনুশীলনের জন্য নয়। এই কিপার-ব্যাটসম্যান হোম অব ক্রিকেেেট পা রেখেছিলেন অন্য কাজে।
অনুশীলন নিয়ে মুশফিক বরাবরই সিরিয়াস। আনুষ্ঠানিক অনুশীলন পর্ব তো দূরের কথা, ঐচ্ছিক অনুশীলন পর্বও কখনও মিস করেন না তিনি। ছুটির দিনগুলোতেও নিজ উদ্যোগে তাকে অনুশীলন করতে দেখা যায়। করোনা মহামারির সময়ে সম্ভবত তার মনটাই সব থেকে বেশি কাঁদছে! ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলনের সুযোগ চেয়ে বিসিবির কাছে আবেদন করেছিলেন মুশফিক। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাস্তবতার জমিনে পা রেখে তার সেই আবেদনে বিসিবি সারা দেয়নি। এরপরও মুশফিকের হঠাৎ শেরেবাংলায় আগমন, কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে বেশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রেসিং রুমে গিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়েছেন তিনি, এরপর নিজের ব্যাট আর কিছু ক্রিকেট সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে গেছেন।
মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস পরে সামাজিক দূরত্বের বিধিবিধান মেনেই হোম অব ক্রিকেটে গিয়ে নিজের কাজগুলো করেছেন মুশফিক। অনুশীলন করতে পারবেন না জেনেও পা রেখেছিলেন মাঠে। এই মাঠে নিজের খেলা সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের সেই টেস্ট ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও ছিলেন তিনি। মুশফিক সেরা খেলোয়াড় ছিলেন এই মাঠে খেলা নিজের শেষ ম্যাচেও, ১৫ মার্চ আবাহনীর জার্সিতে খেলেছিলেন ১২৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। সবুজ-সতেজ ঘাসগুলোর দিকে যখন তাকিয়েছেন, তখন কি ওই সাফল্যগাথার কথা মনে পড়েনি মুশফিকের? পড়েছে অবশ্যই। মাঠে ফেরার জন্য তার প্রাণ যে উতলা হয়ে আছে, সেই অনুভূতি গোপন রাখেননি।
হোম অব ক্রিকেটকে কতটা মিস করছেন মুশফিক, সেটা তার এই বক্তব্যেই পরিষ্কার, ‘মিস করছি চমৎকার এই ভেন্যুকে। একমাত্র সর্বশক্তিমানই জানেন কবে আবার আমরা এখানে অনুশীলন শুরু করতে পারব!’